জাঙ্ক ফুড থেকে বসে থাকা—৫ অভ্যাসেই বাড়ছে তরুণদের কোলন ক্যানসার–ঝুঁকি
বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ বছরের নিচের মানুষদের মধ্যে কোলন ও রেকটাল ক্যানসার (মোটামুটি “কোলন ক্যানসার”) দ্রুত বাড়ছে—এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতন হলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। তাই আজ থাকছে সহজ ভাষায়, কোন কোন ৫টি অভ্যাস তরুণদের ঝুঁকি বাড়ায় এবং কীভাবে বদলালে ঝুঁকি কমে।
১) প্রক্রিয়াজাত মাংস ও জাঙ্ক ফুড বেশি খাওয়া
সসেজ, স্যালামি, বেকন, ন্যাগেটস, প্রিজারভেটিভ দেওয়া মাংস—এসবকে বলে প্রক্রিয়াজাত (Processed) মাংস। আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) এই ধরনের মাংসকে মানুষের জন্য ক্যানসার–সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে, বিশেষ করে কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে। তাই নিয়মিত বা বেশি পরিমাণে খাওয়া ঝুঁকি বাড়ায়।
কি করবেন: সপ্তাহজুড়ে লাল/প্রসেসড মাংস কমিয়ে মাছ, ডাল, ডিম, মুরগি (অল্প তেলে রান্না) ও শাকসবজির পরিমাণ বাড়ান। বাইরে খেলে “গ্রিল/স্টিম/বেকড” অপশন বাছুন।
২) ফাইবার কম, চিনি–সোডা বেশি—এই খাদ্যাভ্যাস
ফাইবার (আঁশ) আমাদের অন্ত্র পরিষ্কার রাখে, ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়, বেঁধে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক তরুণই ভাত–মুরগি–পিজা–পাস্তার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন; ফল, সবজি, গোটা শস্য (ব্রাউন রাইস/ওটস/আটা) ও ডাল কম খান। এতে শরীরের ওজন বেড়ে যায়, অন্ত্রে প্রদাহও বাড়তে পারে—দুই ক্ষেত্রেই কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি (ACS) বলছে, খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়ামহীনতা ও অ্যালকোহল—এই মিলেই বহু ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়।
৩) বসে থাকা, নড়াচড়া কম—ব্যায়ামের অভাব
ঘন্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ/গেমিং/স্ট্রিমিং—এটা এখন অনেকের বাস্তবতা। শারীরিকভাবে কম নড়াচড়া করলে অন্ত্রের গতি কমে, ওজন বাড়ে এবং ইনসুলিন–রেজিস্ট্যান্সের মতো সমস্যা দেখা দেয়—এগুলো মিলেই কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলো সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট “মাঝারি মাত্রার” ব্যায়াম (দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং) বা ৭৫ মিনিট “তীব্র” ব্যায়ামের পরামর্শ দেয়।
কি করবেন: প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা দিয়ে শুরু করুন। ডেস্ক–ওয়ার্কের মাঝে প্রতি ঘণ্টায় ৩–৫ মিনিট দাঁড়িয়ে হাঁটুন, সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
৪) ধূমপান ও অ্যালকোহল
ধূমপানের ক্ষতি নতুন করে বলার কিছু নেই। গবেষণায় দেখা গেছে—ধূমপান ও নিয়মিত অ্যালকোহল পান কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যালকোহল লিভার ও অন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে; ধূমপান অন্ত্রের কোষে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। ACS–এর ঝুঁকি নির্দেশনায় এই দুটোকেই স্পষ্টভাবে কমাতে বলা হয়েছে।
কি করবেন: ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করুন—নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট, কাউন্সেলিং কাজে আসে। অ্যালকোহল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন; নিতেই হলে “কম–কম” নীতি।
৫) ওজন বেড়ে যাওয়া (বিশেষ করে পেটের মেদ)
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কোলন ক্যানসারের বড় ঝুঁকি–কারক। ওজন বাড়লে ইনসুলিন ও ইনফ্ল্যামেশন—দুটোই বাড়ে, যা অন্ত্রের কোষের জন্য খারাপ। টাইপ–২ ডায়াবেটিস থাকলেও ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কি করবেন: ওজন কমাতে “৩টি সি”—ক্যালরি, কন্ট্রোল, কনসিসটেন্সি। প্লেটে অর্ধেকটা সবজি, এক–চতুর্থাংশ প্রোটিন, এক–চতুর্থাংশ গোটা শস্য রাখার চেষ্টা করুন; সপ্তাহে ৪–৫ দিন ৩০–৪৫ মিনিট হাঁটা/ব্যায়াম করুন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
টয়লেটে রক্ত যাওয়া/কালচে পায়খানা
হঠাৎ করে পায়খানার অভ্যাস বদলে যাওয়া (কয়েক সপ্তাহ ধরে)
অকারণে ওজন কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা/ফাঁপা ভাব
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
এগুলো থাকলে লজ্জা না পেয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্ক্রিনিং: বয়স ৪৫ থেকে শুরু
গড় ঝুঁকির মানুষদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর বয়স থেকে নিয়মিত কোলন ক্যানসার স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ সংস্থা। পরিবারে আগে কারও কোলন ক্যানসার থাকলে বা বিশেষ রোগ (যেমন IBD) থাকলে ডাক্তার আরও আগে স্ক্রিনিং করতে বলতে পারেন। স্ক্রিনিংয়ের পদ্ধতি একাধিক—স্টুল–বেসড টেস্ট বা কোলোনোস্কপি—ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করুন।
শেষ কথা
কোলন ক্যানসার “হঠাৎ” হয় না; সময় নিয়ে বাড়ে। তাই খাবারের প্লেট, নড়াচড়া, ওজন, ধূমপান–মদ—এই চারটে জায়গায় ছোট ছোট বদলই বড় সুরক্ষা। প্রতি সপ্তাহে একটা নতুন অভ্যাস যোগ করুন—আজই শুরু হোক ২০ মিনিট হাঁটা বা এক বাটি সালাদ। বদলটা যত তাড়াতাড়ি, ঝুঁকি তত কম। সচেতন থাকুন, নিয়মিত চেক–আপ করুন—নিজে ভালো থাকুন, পরিবারকেও নিরাপদ রাখুন।