নতুন সুপার-অর্থ: ২০ আলোকবর্ষ দূরে ‘আশার গ্রহ

নতুন সুপার-অর্থ: মানুষের জন্য সম্ভাব্য এক আশার গ্রহ

মহাবিশ্ব সবসময়ই মানুষের মনে এক রহস্যময় জগতের দরজা খুলে দেয়। যখন আমরা রাতের আকাশের দিকে তাকাই, মনে হয় — অসংখ্য তারা, অসংখ্য জ্যোতিষ্ক আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমনই এক গ্রহ আবিষ্কার করেছেন, যেটি মানুষের কল্পনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। এর নাম HD 20794 d, যাকে বলা হচ্ছে এক ধরনের “সুপার-অর্থ”। এই গ্রহ পৃথিবীর মতো, কিন্তু কিছুটা বড়, আর আছে এমন এক জোনে যেখানে জীবনের জন্য পানি থাকতে পারে। তাই একে বলা হচ্ছে সম্ভাব্য মানব-বাসযোগ্য গ্রহ

সুপার-অর্থ মানে কী?

সুপার-অর্থ বলতে বোঝায় এমন গ্রহ যার ভর পৃথিবীর থেকে বেশি, কিন্তু জুপিটার বা নেপচুনের মতো বিশাল নয়। HD 20794 d-এর ভর পৃথিবীর প্রায় ছয় গুণ। এর মানে হলো, সেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর তুলনায় বেশি হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তুমি যদি সেখানে ৫০ কেজি ওজনের হও, তবে হয়তো মনে হবে ৩০০ কেজি! তবে এর মানে এই নয় যে সেখানে জীবন থাকা অসম্ভব। বরং বড় গ্রহ হওয়ার ফলে এর বায়ুমণ্ডল হয়তো আরও ভালোভাবে পানি ও গ্যাস ধরে রাখতে পারে।


কতটা দূরে এই গ্রহ?

এই গ্রহ পৃথিবী থেকে প্রায় ২০ আলোকবর্ষ দূরে। শুনে হয়তো মনে হচ্ছে খুব দূর! কিন্তু মহাজাগতিক হিসেবে এটি আসলে অনেকটা “পাশের বাড়ি”। কারণ, আমাদের গ্যালাক্সিতে অসংখ্য তারা আছে যাদের দূরত্ব কয়েক হাজার বা কয়েক মিলিয়ন আলোকবর্ষ। তার তুলনায় এই নতুন গ্রহটি অনেকটা কাছে। এর মানে, আগামী প্রজন্মের টেলিস্কোপ দিয়ে সরাসরি ছবিও তোলা সম্ভব হতে পারে।

হ্যাবিটেবল জোনে কেন এত আলোচনা?

“হ্যাবিটেবল জোন” মানে হলো, গ্রহটি তার নক্ষত্রের এমন এক দূরত্বে ঘুরছে যেখানে পানি তরল আকারে থাকতে পারে। পানি হলো জীবনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিজ্ঞানীরা তাই সবসময় খুঁজে বের করতে চান কোন গ্রহ হ্যাবিটেবল জোনে আছে। HD 20794 d এই জোনের মধ্যেই আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই এটিকে ঘিরে এত উচ্ছ্বাস।


মানুষের বসবাস কি সম্ভব?

এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ এখনো আমরা জানি না এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল কেমন, সেখানে আসলেই পানি আছে কি না, কিংবা জলবায়ু মানুষের জন্য উপযোগী কি না। হতে পারে এটি একেবারেই বন্ধ্যা ও নিষ্প্রাণ। আবার হতে পারে সেখানে জীবনের বীজ অনেক আগে থেকেই লুকিয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা এখনো গভীর গবেষণা করছেন। তবে এটুকু বলা যায়—এই গ্রহে মানুষের বসবাস সম্ভব কি না তা জানার জন্য আমাদের সামনে অনেক রোমাঞ্চকর সময় অপেক্ষা করছে।


ভবিষ্যতের বিজ্ঞান কী বলছে?

এই মুহূর্তে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপসহ আরও কিছু বড় বড় টেলিস্কোপ এই গ্রহ নিয়ে গবেষণা করছে। ভবিষ্যতে “Extremely Large Telescope” নামের বিশাল এক টেলিস্কোপ সরাসরি এই গ্রহের আলো বিশ্লেষণ করতে পারবে। তখন আমরা জানতে পারব এর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড বা মিথেন আছে কি না। এসব গ্যাস থাকলে জীবনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

মানুষের স্বপ্ন: নতুন পৃথিবী

পৃথিবী আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত — জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তাই মানুষ সবসময় ভাবছে, পৃথিবীর বাইরে কোনো বিকল্প বাসস্থান আছে কি না। HD 20794 d হয়তো সেই উত্তর নয়, কিন্তু এটি এক বড় পদক্ষেপ। এটা প্রমাণ করে আমরা একা নই, মহাবিশ্বে আরও অনেক “পৃথিবীসদৃশ” গ্রহ লুকিয়ে আছে।


সাধারণ মানুষের জন্য সহজ বোঝার মতো উদাহরণ

ভাবো, পৃথিবী যেন আমাদের পুরোনো বাড়ি। এখন এই গ্রহটি হলো পাশের এক নতুন বাড়ি যেটি এখনো তালাবদ্ধ, ভেতরে কী আছে আমরা জানি না। বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে খুব সুন্দর, বাগান আছে, জানালা দিয়ে আলো আসছে। কিন্তু দরজা না খোলা পর্যন্ত বলা যাবে না ভেতরে থাকা যায় কি না। ঠিক এভাবেই বিজ্ঞানীরা এই নতুন গ্রহটিকে দেখছেন।


বিজ্ঞান + কল্পনার মিশেল

এই আবিষ্কার আমাদের কল্পনাকে উসকে দেয়। আমরা হয়তো আগামী কয়েকশো বছরে মহাকাশযান পাঠিয়ে এই গ্রহে পৌঁছাতে পারব না, কারণ দূরত্ব এখনো অনেক। কিন্তু কল্পনা করা যায়, একদিন হয়তো মানুষের নাতি-নাতনিরা সেখানে বসবাস করবে। স্কুলে যাবে, খেলার মাঠে দৌড়াবে, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আমাদের পৃথিবীকে “পুরোনো বাসস্থান” বলে ডাকবে।


উপসংহার

HD 20794 d আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মহাবিশ্বে আমরা একা নই, আর অনেক কিছু এখনো অজানা। বিজ্ঞানীদের চোখে এই গ্রহ শুধু গবেষণার সুযোগ নয়, সাধারণ মানুষের চোখে এটি এক স্বপ্নের ঠিকানা। হয়তো আজ আমরা শুধু দূর থেকে তাকাচ্ছি, কিন্তু আগামী দিনের বিজ্ঞান আমাদের আরও কাছে নিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।