এলিয়েন সভ্যতা: পৃথিবীর কাছাকাছি কি কেউ আছে?

বুদ্ধিমান এলিয়েন সভ্যতা কতটা দূরে?

বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে মহাকাশে এলিয়েন বা অন্যান্য বুদ্ধিমান প্রাণী খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আমরা কি একা এই বিশাল মহাবিশ্বে? বা কোথাও কি আমাদের মতো বুদ্ধিমান এলিয়েন সভ্যতা আছে? এমন প্রশ্ন বহু দিন ধরে মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সম্প্রতি কিছু বিজ্ঞানী একটি গবেষণা চালিয়ে জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে একাধিক আলোকবর্ষ দূরে এমন এলিয়েন সভ্যতা থাকতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি কোনো উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন এলিয়েন সভ্যতা আমাদের কাছাকাছি থাকে, তবে তার অবস্থান পৃথিবী থেকে 33,000 আলোকবর্ষ দূরে হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে, মহাকাশে বুদ্ধিমান প্রাণী খোঁজা সহজ কাজ নয় এবং আমাদের কাছে তাদের পৌঁছানো বা তাদের খোঁজা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। তবে, এই গবেষণার মাধ্যমে যে ধারণা সামনে এসেছে তা আমাদেরকে অনেক নতুন প্রশ্ন এবং তথ্য দিয়েছে।

কেন এলিয়েন সভ্যতা এত দূরে থাকতে পারে?

গবেষকরা বলছেন, পৃথিবী বা আমাদের মতো প্রাণী ধারণক্ষম গ্রহ খুবই কম। এই গ্রহগুলোর বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়, যেমন পৃথিবীর মতো উপযুক্ত বাতাস, তাপমাত্রা এবং জলবায়ু। একটি গ্রহে উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠতে হলে সেই গ্রহে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, গ্রহে যদি প্লেট টেকটনিকস (যা পৃথিবীর ভূ-তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটায়) না থাকে, তবে সেখানে অনেক কম সময়ে জীবনের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যেতে পারে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অক্সিজেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্বন ডাইঅক্সাইড আমাদের জীবনের জন্য দরকারি, কারণ এটি গাছপালা দিয়ে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় জ্বালানী উৎপন্ন করতে সহায়তা করে। তবে যদি এই গ্যাস অত্যাধিক হয়ে যায়, তবে গ্রহটি ভীতিকর হতে পারে এবং সেখানে জীবন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, গ্রহে অক্সিজেন না থাকলে, আগুন জ্বালানো সম্ভব হবে না এবং এর ফলে প্রযুক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।

পৃথিবী থেকে কত দূরে এলিয়েন সভ্যতা থাকতে পারে?

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন যে, যদি পৃথিবীর মতো গ্রহে কোনো উন্নত প্রযুক্তির এলিয়েন সভ্যতা গড়ে ওঠে, তবে তাদের আমাদের কাছে 33,000 আলোকবর্ষ দূরে থাকতে পারে। এর মানে, মহাবিশ্বের একেবারে অন্য অংশে তাদের অবস্থান। এবং, এমন সভ্যতা যদি 280,000 বছর ধরে টিকে থাকে, তবেই তারা আমাদের সভ্যতার সাথে সময়ের মধ্যে সঙ্গতি রাখতে পারবে।

তবে, বিজ্ঞানীরা এটাও বলেছেন যে, এই ধরনের সভ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে উপযুক্ত শর্তগুলো দরকার, সেই শর্তগুলো অত্যন্ত বিরল। গবেষণাটি আরও বলছে যে, পৃথিবীর মতো জীবনের জন্য উপযোগী গ্রহের সংখ্যা সীমিত এবং এর মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি সম্ভব হওয়ার মতো সভ্যতা আরেকটি বিরল ঘটনা।

SETI এবং এলিয়েন সিগন্যালের সন্ধান

তবে এই সঙ্কটজনক এবং আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও, বিজ্ঞানীরা SETI (Search for Extraterrestrial Intelligence) নামক একটি প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন একটি প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাকাশে অন্য সভ্যতার সিগন্যাল খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। SETI, এলিয়েনদের খুঁজে বের করার জন্য সিগন্যাল এবং সংকেত শোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যদি কোনো এলিয়েন সভ্যতা সত্যিই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চায়, তবে তারা মহাকাশে এক ধরনের সিগন্যাল পাঠাতে পারে, যা আমরা বুঝতে পারি।

তবে, যদি এলিয়েন সভ্যতার সিগন্যাল না পাওয়া যায়, তবে সেটি আমাদের তত্ত্বকেই সত্যি বলে প্রতিস্থাপন করবে এবং তা হবে একটা বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। তবে যদি বিজ্ঞানীরা কোনো এলিয়েন সিগন্যাল পেয়ে যান, তাহলে এটি হবে ইতিহাসের অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, কারণ তখন আমরা জানতে পারব যে, মহাবিশ্বে আমরা একা নই!

শেষ কথা

অতএব, বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত মহাকাশে এলিয়েন সভ্যতার অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে, তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যদি কোনো এলিয়েন সিগন্যাল পাওয়া যায়, তবে সেটি হবে এক বিশাল সাফল্য। এখন পর্যন্ত যা বোঝা গেছে তা হলো, মহাকাশে বুদ্ধিমান প্রাণী খোঁজা অনেক কঠিন কাজ এবং সম্ভাবনাও অনেক কম, তবে আমাদের এ বিষয়ে অন্বেষণ চালিয়ে যেতে হবে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।