ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও সচেতনতা: জনগণের ভূমিকা অপরিহার্য
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এই বছরও ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে চলেছে, যার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম থেকে বর্ষা মৌসুমের আগেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগ ডেঙ্গুতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় ৪৪ শতাংশ রোগী রয়েছে। বরগুনা জেলার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক; এ পর্যন্ত সেখানে হাজারের অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মোটামুটি সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে ৫৮টি জেলায়, যদিও কিছু জেলায় যেমন চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, সুনামগঞ্জ ইত্যাদিতে এখনও ডেঙ্গুর রোগী কম বা নেই। তবে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা এমনিতেই বাড়ছে দ্রুতগতিতে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ায় চিকিৎসা সেবা প্রদানে দেরি হচ্ছে এবং চিকিৎসক ও নার্সরা অপ্রতুল সামর্থ্যের মধ্যে কাজ করছেন। অনেক সময় সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে আইসিইউ পর্যায়ের রোগী থাকায়।
এদিকে, চলতি মাসেই ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১২ জন রোগীর মৃত্যু ঘটেছে, যা চলমান বছর সবচেয়ে বেশি। মৃত্যুর এই উচ্চ সংখ্যার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে দেরিতে চিকিৎসা নেওয়া এবং রোগের গুরত্ব অবহেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা মৃতের সংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলছে। নারীরাও বিশেষত স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, যা রোগ শনাক্তকরণে বিলম্ব ঘটাচ্ছে।
সরকার ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো ডেঙ্গু সংক্রমণ মোকাবেলায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, তা যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইমার্জেন্সি ও কন্ট্রোল রুম থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হচ্ছে। তারা আরও বলছেন, মেডিকেল সাপ্লাই যেমন স্যালাইন এবং ওষুধের অভাবে কিছু হাসপাতাল সমস্যায় পড়েছে। অধিকন্তু ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পরিকল্পিত ও বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থাপনার অভাব রোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রতিরোধে গুরুত্ব
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশার প্রজননের জন্য পরিষ্কার পানি জমা রাখা অন্যতম প্রধান কারণ। দেশের অনেক এলাকায় অসচেতনতা এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবের কারণে এডিস মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও মশার প্রজনন ঠেকানো। বাড়ি-ঘর ও আশেপাশের পরিবেশে পানি জমে না থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যাবশ্যক। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি ফেলা, রক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ (যেমন ডেঙ্গু প্রতিরোধী পোশাক পরা, মশারি ব্যবহার) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত শনাক্তকরণ এবং যথাযথ চিকিৎসা চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগীর জীবন রক্ষায় অপরিহার্য। যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি, কারণ দেরি করলে রোগের জটিলতা বাড়তে পারে ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য বিপদের রূপ নিতে চলেছে। সুস্থ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে সরকার, স্বাস্থ্য সংস্থা ও জনগণের মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়াও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানোর সুযোগ রয়েছে।
এই অবস্থায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, স্বাস্থ্যের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং জরুরি অবস্থায় তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।