বন্ধু ছাড়া নয়—গিনিপিগের সুখ রক্ষায় সুইজারল্যান্ডের আইন

পশুরও বন্ধু লাগে: গিনিপিগ একা রাখা বেআইনি সুইজারল্যান্ডে

ধরো, তোমার বাড়িতে একটাই গিনিপিগ আছে। সুইজারল্যান্ডে হলে—এই একটাই ব্যাপারেই বিপত্তি! সেখানে নিয়ম হলো: গিনিপিগ একা রাখা যাবে না; একসঙ্গে কমপক্ষে দু’টি রাখতে হবে। কথা শুনতে মজার, কিন্তু এটা একদম সরকারি নিয়ম, বইয়ে-কলমে লেখা।

কেন এমন আইন? কারণ গিনিপিগ খুব সামাজিক প্রাণী। বনে-জঙ্গলে এরা দলে থাকে, নিজেদের মতো শব্দ করে, গায়ে-গা ঘেঁষে থাকে—মানে সঙ্গী ছাড়া ওদের মানসিক চাপ বাড়ে। তাই সুইস কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট লিখেছে: “গিনিপিগ সামাজিক জীব; অন্তত দুইটি একসঙ্গে রাখতে হবে।” এটাও বলা আছে, কারও শরীর-মন যাতে কষ্ট না পায়—এটাই প্রাণিসুরক্ষা আইনের মূল কথা।

এই নিয়ম নতুন কোনো “ট্রেন্ড” না। ২০০৮ সালেই সুইজারল্যান্ডে সামাজিক প্রাণীদের একা রাখা নিষিদ্ধ হয়—তার মধ্যে আছে গিনিপিগ, ইঁদুর, ইঁদুরজাতীয় অন্য পোষা প্রাণী, এমনকি ক্যানারি আর তোতাপাখিও। মানে, যাদের জন্মই দলে থাকার, তাদের একা রাখা যাবে না—এটাই মূল নীতি। 

শুধু “সংখ্যা” ঠিক করলেই শেষ না—কীভাবে রাখবে, তাও নিয়মে লেখা। যেমন, দুইটি গিনিপিগের জন্য খাঁচার ন্যূনতম জায়গা হতে হবে অর্ধেক বর্গমিটার (ধরা যাক ১ মিটার লম্বা আর ৫০ সেন্টিমিটার চওড়া)। তিন নম্বর গিনিপিগ যোগ হলে অতিরিক্ত জায়গাও যোগ করতে হবে। সাথে থাকতে হবে লুকোনোর ঘর, নরম বিছানা, কাঠের ডাল বা নরম কাঠ—যেন ওরা দাঁত ঘষতে পারে, নিরাপদ লাগে, দৌড়ঝাঁপও করতে পারে।

“কিন্তু আমার দু’টি ছিল, হঠাৎ একটা মারা গেল—তাহলে?” এখানেই আসে সুইস–স্টাইল সমাধান। সেখানে আছে ‘রেন্ট-এ-গিনিপিগ’—অর্থাৎ সাময়িক সময়ের জন্য সঙ্গী ভাড়া! কেউ চাইলে বয়স্ক গিনিপিগের পাশে আরেকটা সঙ্গী কিছুদিনের জন্য নিতে পারে, যাতে আইনও মানা হয়, আর পোষা প্রাণীটাও একা না থাকে। আজব শোনালেও ঘটনাটা বাস্তব, আর বহু বছর আগেই সুইস মিডিয়া-আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর হয়েছে। 

আইন ভাঙলে কী হয়? সুইস প্রাণিসুরক্ষা আইন প্রাণীর “কল্যাণ” আর “মর্যাদা” রক্ষা করে। গুরুতর লঙ্ঘন ধরা পড়লে মালিকের ওপর শাস্তি, এমনকি প্রাণী পালনে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। তাই নিয়মটা মজা করার জন্য নয়—এটা সিরিয়াস বিষয়, কিন্তু লক্ষ্য একটাই: প্রাণীর ভালো থাকা। 

আরো একটা কাজে লাগা তথ্য: সুইজারল্যান্ডে পোষা প্রাণী রাখা মানে শুধু ভালোবাসা না—দায়দায়িত্বও আছে। সরকারি নির্দেশনায় পোষা ও বন্য প্রাণী রাখার নিয়ম-কানুন, কী কী মানতে হবে—সব লেখা থাকে। তাই কেউ সেখানে গিনিপিগ নিলে, আগে নিয়মগুলো দেখে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।